ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্র ৮ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্র ৮ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর: জনাব মাহমুদ একটি ডিজিটাল ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান-এর ব্যবস্থাপক। তিনি ব্যবসায়িক পণ্য সরবরাহের জন্য উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকদের কাছে সংবাদ পাঠালেন। তার চাহিদামাফিক উৎপাদক ও আমদানিকারকরা নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য পাঠালেন। জনাব মাহমুদ উত্ত পণ্যসামগ্রী বুঝে নিয়ে সরবরাহকারীদের কৃতজ্ঞতা জানালেন। উক্ত ঘটনায় বর্ণিত সংবাদ বিনিময়ের কাজকেই যোগাযোগ বলে অভিহিত করা হয়।


ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্র ৮ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন-১. নিম্নগামী যোগাযোগ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: যোগাযোগ হলো দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে কোনো ঘটনা, ধারণা বা তথ্যের বিনিময়। নিম্নগামী যোগাযোগে প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন নির্বাহীগণ যখন অধস্তনদের সাথে যোগাযোগ করে। এক্ষেত্রে যোগাযোগ প্রবাহে তথ্য নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। ব্যবস্থাপকগণ প্রয়োজনীয় আদেশ, নির্দেশ ও পরামর্শ অধস্তনদের দেয় এবং কর্মীরা তা পালন করে। এতে তথ্যের প্রবাহ ওপর থেকে নিচের দিকে ধাপে ধাপে চলতে থাকে।

প্রশ্ন-২. সমান্তরাল যোগাযোগের প্রয়োগ সম্পর্কে লেখো।

উত্তর: সংগঠন কাঠামোর বিভিন্ন বিভাগে একই মর্যাদাভুক্ত বা স্তরের কর্মীদের মধ্যে তথ্য বিনিময় হলে, তাকে সমান্তরাল যোগাযোগ বলে।

তথ্য প্রবাহ অনুযায়ী যোগাযোগের অন্যতম ধরন হলো সমান্তরাল যোগাযোগ। প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বিভাগের প্রধান এবং বিক্রয় বিভাগের প্রধানের মধ্যে কোনো তথ্য বিনিময় হলে সমান্তরাল যোগাযোগের প্রয়োগ হয়।

প্রশ্ন-৩. আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি, পদ্ধতি প্রভৃতি অনুসরণ করে তথ্য আদান-প্রদান করাকে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বলে। এ ধরনের যোগাযোগে প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রতিষ্ঠানের সব নিয়ম-নীতি জানিয়ে দেওয়া হয়। এতে সবাই তাদের কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারে। এছাড়া, এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানানো হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়। যেমন: সাক্ষাৎকার, নোটিশ বা বিজ্ঞাপ্তি, বক্তব্য দেওয়া প্রভৃতি আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের উদাহরণ।

প্রশ্ন-৪. গোলযোগ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: শোরগোল, কোলাহল, শব্দ দূষণ প্রভৃতি কার্যকর যোগাযোগে বাধা তৈরি হওয়াই হলো গোলযোগ। সাধারণত মৌখিক যোগাযোগে সুষ্ঠু সংবাদ প্রবাহ গোলযোগ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর কারণে স্পষ্টভাবে তথ্য পাওয়া যায় না। এতে যোগাযোগের ফলপ্রসূতা ব্যাহত হয়।

প্রশ্ন-৫. ফলাবর্তন বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
অথবা, ‘ফলাবর্তন যোগাযোগ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান’-ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: ফলাবর্তন বলতে প্রেরকের সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাপকের দেওয়া প্রত্যুত্তর বা মনোভাব প্রকাশকে বোঝায়। এর মাধ্যমে প্রাপকের কাছে তথ্যের বা সংবাদের বিষয়বস্তু স্পষ্ট হচ্ছে কি না তা জানা যায়। এতে প্রেরক প্রাপকের মনোভাব বা উত্তর জানতে পারে। প্রয়োজনে একাধিকবার উত্তর-প্রত্যুত্তরের মধ্য দিয়ে যোগাযোগের উদ্দেশ্য অর্জিত হয়।

প্রশ্ন-৬, যোগাযোগের ক্ষেত্রে ফলাবর্তন কেন প্রয়োজন? ব্যাখ্যা করো।
অথবা, কার্যকর যোগাযোগে ফলাবর্তন অপরিহার্য কেন? 

উত্তর: ফলাবর্তন বলতে প্রেরকের সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাপকের দেওয়া প্রত্যুত্তর বা মনোভাব প্রকাশকে বোঝায়।

এটি যোগাযোগ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়। এর মাধ্যমে প্রেরক প্রাপকের মনোভাব বুঝতে পারে। আর প্রাপক যদি সংবাদের প্রত্যুত্তর এবং নিজের মনোভাব প্রেরকের কাছে প্রকাশ করে, তাহলে প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। এছাড়া, যোগাযোগ প্রক্রিয়াকে গতিশীল রাখতে এবং সুষ্ঠুভাবে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ফলাবর্তন আবশ্যক।

প্রশ্ন-৭. যোগাযোগ কীভাবে ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়াতে পারে? ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: ব্যবস্থাপনায় সফলতার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো সুষ্ঠু যোগাযোগ। ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সুষ্ঠু যোগাযোগ খুবই সহায়ক। এর মাধ্যমে কর্মীদের সঠিকভাবে কাজের নির্দেশনা দেওয়া যায়। এতে কর্মীরা সহজে কাজ বুঝে নিতে পারে। সুষ্ঠু যোগাযোগের ফলে কর্মীদের দায়িত্ব নেওয়া, দায়িত্ব দেওয়া কিংবা দায়িত্ব পালন সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়। এভাবে ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ে।

প্রশ্ন-৮, মতামত গঠনে যোগাযোগের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: যোগাযোগের মাধ্যমেই মতামতের পূর্ণ প্রকাশ হয়। এটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মতামত, ভাব, তথ্য বিনিময় করে সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করে।

যোগাযোগের মাধ্যমে সকলের মতামতের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে, কর্মীদের কাজে উৎসাহ বাড়ে। মতামত দেওয়ার মাধ্যমে কাজ করায় কর্মীদের মাঝে মনোমালিন্য দূর হয় এবং মনোবল উন্নত হয়। এভাবে মতামত গঠনে যোগাযোগ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন-৯. যোগাযোগ কীভাবে শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্কের উন্নয়ন করে? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ব্যবস্থাপক বা নির্বাহীদের সাথে শ্রমিক-কর্মীদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে যোগাযোগ শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্কের উন্নয়ন করে।

প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকলে শ্রম বিরোধ দেখা দেয়। যোগাযোগের মাধ্যমে শ্রমিক সংঘ ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা যায়। ফলে তাদের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।

প্রশ্ন-১০, ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: প্রতিষ্ঠানের অধীনস্থ কর্মচারীরা কোনো সংবাদ বা তথ্য নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে, তাকে ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ বলে।

এটি মূলত নির্দেশনার ভিত্তিতে যোগাযোগ। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় তথ্য (পণ্য বাজার, প্রতিযোগীদের অবস্থা প্রভৃতি) সম্পর্কে সাধারণত নিম্ন পর্যায়ের কর্মীরাই বেশি জানে। এসব তথ্য বা যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অধীনস্থ কর্মী তার ঊর্ধ্বতনের কাছে প্রেরণ করে। ফলে তাদের মধ্যে যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হ্যয়, তাই উর্ধ্বগামী যোগাযোগ।

প্রশ্ন-১৪. ‘নীরবতা এক ধরনের যোগাযোগের মাধ্যম’ ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: লিখিত এবং মৌখিক মাধ্যম ব্যবহার না করে শুধু নীরবতা দেখিয়ে যোগাযোগ করা হলে, তাকে নীরব যোগাযোগ মাধ্যম বলে। একে এক ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম বলে। কারণ নীরবতা কোনো সংবাদের ক্ষেত্রে ইতিবাচক বা নেতিবাচক অর্থ বহন করতে পারে।

প্রশ্ন-১৫. গণযোগাযোগ বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: গণযোগাযোগ হলো ব্যাপক কোনো জনগোষ্ঠীর কাছে একই সংবাদ একসাথে দ্রুত প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত যোগাযোগ ব্যবস্থা। সাধারণত রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, ক্ষুদে বার্তা, লিফলেট প্রভৃতির মাধ্যমে গণযোগাযোগ সংঘটিত হয়। এ ধরনের যোগাযোগ মূলত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে একসাথে জানানোর উদ্দেশ্যে প্রচারিত হয়।

প্রশ্ন-১৬. টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপন কোন ধরনের যোগাযোগ? বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপন গণযোগাযোগের অন্তর্ভুক্ত। গণযোগাযোগ বলতে বিভিন্ন স্থানে থাকা জনগোষ্ঠীর কাছে একই সংবাদ একসাথে পৌছানোর জন্য ব্যবহৃত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বোঝায়। এ ধরনের যোগাযোগ মূলত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বাইরের জনগণের উদ্দেশ্যে প্রচারিত হয়। টেলিভিশনের প্রচারিত তথ্য বা সংবাদ একই সাথে অনেক মানুষ জানতে পারে। তাই বলা যায়, টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপন গণযোগাযোগের অন্তর্ভুক্ত।

প্রশ্ন-১৭. দ্বিমুখী যোগাযোগ সম্পর্কে লেখো।

উত্তর: দুই পক্ষ থেকেই তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে যে যোগাযোগ করা হয়, তা-ই দ্বিমুখী যোগাযোগ।

এ যোগাযোগে প্রেরক প্রাপকের কাছে তথ্য প্রেরণ করে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাপক প্রেরককে তার প্রতিক্রিয়া জানায়। এভাবে প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে দ্বিমুখী যোগাযোগ সংঘটিত হয়।

প্রশ্ন-১৮. লিখিত যোগাযোগকে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: প্রেরক কোনো সংবাদ বা তথ্য লিখিতভাবে প্রাপকের কাছে প্রেরণ করলে, তাকে লিখিত যোগাযোগ বলে। এ যোগাযোগ প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয়। এতে বার্তার প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা, প্রাসঙ্গিক বিষয় প্রভৃতি সংযুক্ত করা আবশ্যক। তাই লিখিত যোগাযোগকে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বলা হয়।

প্রশ্ন-১৯. ভুল বোঝাবুঝির অবসানে লিখিত যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তর: লিখিত যোগাযোগ হলো শব্দ বা বাক্য লিখে মনের ভাব প্রকাশ ও তথ্য বিনিময় করা।

এ যোগাযোগে শব্দ ব্যবহার করে অর্থপূর্ণ সংবাদ লিখে তা প্রাপকের কাছে প্রেরণ করা হয়। এ ব্যবস্থায় সংবাদটি দলিল আকারে সংরক্ষিত থাকে। এছাড়া, যোগাযোগের পক্ষসমূহের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে লিখিত সংবাদ প্রমাণ হিসেবে দেখানো যায়। ফলে পক্ষসমূহের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়।

প্রশ্ন-২০. মৌখিক যোগাযোগ বলতে কী বোঝ? 

উত্তর: মৌখিক শব্দ ও ভাষার মাধ্যমে তথ্য বিনিময় ও মনের ভাব প্রকাশ করা হলো মৌখিক যোগাযোগ।

এ ধরনের যোগাযোগে প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে সরাসরি তথ্যের বিনিময় হয়। এতে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকে না। আবার, যেকোনো সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যায়। যে কেউ এ যোগাযোগের তথ্য সহজে বুঝতে পারে। সামনা-সামনি কথোপকথন, সভা, সাক্ষাৎকার, টেলিফোনে কথোপকথন প্রভৃতি মৌখিক যোগাযোগের অন্তর্ভুক্ত।


আরও দেখুন: ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *